| শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৬ | পড়া হয়েছে 839 বার
তথ্যটি হতাশাব্যঞ্জক ও দুঃখজনক। বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে ১৫ বছরের কম বয়সী একটি কন্যাশিশুর বিয়ে হয়। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে শিশু অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে এই দুঃখজনক তথ্যটি জানানো হয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে এক শ’ কোটির অধিক কন্যাশিশু নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। অধিকার বঞ্চিত এসব শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে ২০১১ সাল থেকে দিবসটি পালন করা হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানবিক বিপর্যয়ের সময়ও মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়। কন্যাশিশুর বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশে ১৮ শতাংশ মেয়ের ১৫ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে হয়। ইউনিসেফের মতে বর্তমানে বিশ্বে ৭০ কোটি মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার। এই ধারা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে ৯৫ কোটিতে পৌঁছতে পারে।
বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে আমাদের সমাজ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। এমনকি এখন বাল্যবিয়ের ঝুঁকির ভেতর রয়েছে এমন অল্প বয়সী মেয়ে নিজেই নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছে সমাজে এমন দৃষ্টান্তও তৈরি হয়েছে দেশে। তারপরও দেশ থেকে এই ব্যাধি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফ গত বছর মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার জরিপ প্রকাশ করে। ওই জরিপ অনুযায়ী বাল্যবিয়েপ্রবণ ১০ জেলা হচ্ছে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জামালপুর, কুষ্টিয়া ও খুলনা। জরিপে দেখা যাচ্ছে যেসব এলাকায় জন্মনিবন্ধনের হার কম, সেখানে বাল্যবিয়ের হার বেশি। বাল্যবিয়েপ্রবণ এলাকায় জন্মনিবন্ধনের হার ১৫ দশমিক ৯ থেকে ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত। জন্ম সনদ থাকলে কাজী, আইনজীবী সবাই বিয়ে পড়ানোয় দ্বিধা করেন না। সন্দেহ হলেও প্রশ্ন না তোলার প্রবণতা বেশি, যা কাক্সিক্ষত নয়। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসচেতন অভিভাবকরা। এ ধরনের সমস্যায় বাল্যবিয়ে রোধ করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া জন্ম সনদ দেয়া বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া নোটারি পাবলিক বিয়ের হলফনামা না দিলেও বাল্যবিয়ে কমে আসবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত এক সেমিনারে অবশ্য জানান, নতুন আইনে নোটারি পাবলিকের কোন ভূমিকা থাকবে না।
বাংলাদেশের সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের জন্য বিয়ের আইনী বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর। ১৮ ও ২১ বছর বয়সের নিচে কোন মেয়ে ও ছেলেশিশুর মধ্যে বিয়ে হলে তা বাল্যবিয়ে হিসেবে পরিগণিত হবে। মেয়েদের বিয়ের বয়স হিসেবে আঠারোকে একটা স্ট্যান্ডার্ড ধরে নেয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশে। যেমন ইংল্যান্ডে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮, আমেরিকায় ১৮, ফ্রান্স-জার্মানি-ইতালি-স্পেনেও ১৮। এমনকি সার্কভুক্ত দেশ ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কায় ওই আঠারোই। লক্ষণীয়, চীন-জাপানে মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স ২০, মালয়েশিয়ায় একুশ। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ষোলো। আমাদের দেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬-তে নিয়ে আসার কথা উঠলেও পরে তা কার্যকর হয়নি। প্রচলিত আইন নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বাল্যবিয়ে সমাজে চালু রয়েছে যতটা না আইনের কারণে, তার চেয়ে বেশি প্রয়োগের অভাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে সরকারের বাল্যবিয়ে বন্ধ করার লক্ষ্যকে সফল করতে হলে নতুন আইনটিকে সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ |